রোমাঞ্চকর ভূতের গল্প | বাংলা ভুতের গল্প | Bhuter Golpo | Bangla Horror Story
রোমাঞ্চকর ভূতের গল্প | বাংলা ভুতের গল্প | Bhuter Golpo | Bangla Horror Story
ভুতের সত্য ঘটনা
দাদুর বিছানার পাশে ৬/৭ হাত দূরে আরেকটি বিছানায় আমি ঘুমাতাম। দাদু যতক্ষণ সজাগ থাকতেন, আমার সাথে গল্প করে যেতেন। কখনো একা একাও গল্প করতেন। রাত ২/৩ টার সময় ঘুম ভেঙে গেলে দেখতাম উনি কথা বলে যাচ্ছেন। কথার মাঝখানে বলতেন-
'বুঝেছিস জেনি, কি হয়েছিলো তখন?'
আমি কিছুই শুনি নি, কিছুই বুঝি নি।
তবুও বলতাম- হ্যাঁ, বুঝেছি। রাত অনেক হয়েছে, এবার ঘুমাও।
উনি 'আচ্ছা' বলে ঘুমিয়ে যেতেন।
উনার স্ট্রোকের পর থেকে আমরা লাইট জ্বালিয়েই ঘুমাতাম। আমার সাহসী দাদু তখন লাইট নিভিয়ে দিলে ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করতেন। অথচ, এক সময় ঘুমাতে গেলে আলোর ছিটেফোঁটাও দাদুর সহ্য হতো না।
আমি রাতে ঘুম ভাঙলে তৎক্ষণাৎ উঠেই দাদুর দিকে তাকাতাম, উনি কি করছেন; সেটা দেখতাম।
মনে হতো, দাদু ঘুমের মধ্যেই একদিন চলে যাবেন। এই চিন্তায় মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙে যেতো। যখন দেখতাম, দাদু ঘুমোচ্ছেন, চিন্তামুক্ত হতাম।
প্রায় রাতেই দাদু না ঘুমিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। ঘুমের ঘোরে আমি তাকালে ভয় পেয়ে যেতাম। বলতাম- এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমার ভয় লাগে তোমার তাকানো দেখে। অন্য দিকে তাকাও..
দাদু হেসে বলতেন- তুই যে ঘুমাচ্ছিস, তোকে দেখছি রে বোন।
২০১৮ এর শেষের দিক থেকে দাদু উল্টা পাল্টা কথা বলতে শুরু করলেন। এক সন্ধ্যায় উনি চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বললেন-
'জেনি, তোর মা এটা কি করলো? ওহী'কে (আমার ছোট ভাই) এভাবে মারলো কেন? ওর এতো বড় সাহস হলো কি করে, আমার টিয়া পাখির গা'য়ে হাত তোলে?'
আমি অবাক হয়ে বললাম-
কখন মারলো? কেন, ও কিছু করেছিলো নাকি?
দাদু বললেন-
'বিশ্বাস না হলে আমার খাটের নিচে দেখ। ওহী খাটের নিচে লুকিয়ে কান্না করছে। ওঠ রে টিয়া পাখি, ওঠ। আর কাঁদিস না।' (উনি কেঁদে কেঁদে এসব বলছেন)
Bhooter Golpo
দাদুর মুখে এসব শুনে ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো। আমি দিব্যি দেখছি, ওহী পাশের ঘরে টিভি দেখছে। ওকে ডেকে এনে বললাম- দাদু, কি সব আবোল তাবোল বলছো? এই যে, ওহী....
আরেক দিন দুপুর বেলায় দাদু কান্না করছেন। বলছেন-
হায় আল্লাহ্! আমাকে দেখার কেউ নেই। আর কেউ আসবেও না। এখন কে আমাকে তুলবে?
আমি উনার পাশেই একটা টেবিলে বসে পড়ছিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে? তোমাকে কে কোথায় তুলবে?
উনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন-
'জেনি গো, আমি কবরে পড়ে গেছি। আমাকে কবর থেকে তোল বোন, আমাকে এখনই মাটি দিয়ে দিবে। আমাকে তাড়াতাড়ি তোল।'
এ কথা শুনে আমার চোখে পানি এসে গেলো।
ভয় তো পেলাম, কিন্তু আমার ভয় কাটানোর চেয়ে দাদুর ভয় কাটানো'কে জরুরি মনে করলাম।
উনার পাশে গিয়ে বললাম-
দাদু, তুমি তোমার ঘরে বিছানায় আছো। কবর কই পেলে?
-কেন? এই যে আমার মাথার উপর আকাশ, নারিকেল গাছ। আমি কবরের ভেতর।
-আচ্ছা, বলো তো আমি কই?
-তুই আমার পাশে।
-হ্যাঁ, যেহেতু আমি তোমার পাশেই। তার মানে আমিও কবরের ভেতরে তোমার সাথেই আছি। ভয় পেয়ো না।
আমরা দু'জন একসাথে বের হয়ে আসবো। এবার চোখ বন্ধ করে ঘুমাও।
Vuter Golpo
আমার কথা শুনে দাদু খুব খুশি হলেন, ভয় কমে আসলো। ঘুমিয়ে পড়লেন।
আরেক দিন দুপুরে উনি বার বার ডান পা নাড়াচ্ছিলেন, আর বলছিলেন-
'হতচ্ছাড়া বান্দর। আমার পা ছাড়। আমার বাড়িতে এসে আমার পা ধরে টানাটানি করছিস। তোকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখবো'
আমি এক মুহূর্তের জন্য ভাবলাম আমার বোনের ছেলে এসেছে বোধহয়। ও দাদুর সাথে মজা করছে। কিন্তু কাছে এসে দেখি কেউ নেই। দাদুকে জিজ্ঞেস করলে উনি বলেন-
তুই দেখছিস না, কতোগুলো বাচ্চা আমার পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছে? আমার পা ধরে টানাটানি করছে?
কিন্তু কোথাও কেউ নেই।
দাদুর মৃত্যুর আগে একদিন রাত ৯টার দিকে পাশের ঘরে বসে টিভি দেখছি। এমন সময় উনার চিৎকার কানে আসলো। গিয়ে দেখি, উনি বিছানার কাঠে দু'হাত শক্ত করে ধরে রেখেছেন; কাঁদছেন, চোখেমুখে ভয় লেগে আছে।
আমিও কেঁদে ফেললাম। বললাম-
দাদু, কি হয়েছে তোমার?
আমার কণ্ঠ শুনে দাদু বিছানার কাঠ ছেড়ে আমাকে ধরার জন্য হাত এপাশ ওপাশ করলেন। আমি উনার হাত ধরলাম। আমার স্পর্শ পেয়ে উনি মনে হচ্ছিলো ভয়কে জয় করেছেন।
বললেন- দেখ, সাদা কাপড় পরা লোকটা আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি মারা যাবো, আমাকে বাঁচা বোন। আমাকে যেতে দিস না। ওই লোক আমাকে মেরে ফেলবে।
এসব শুনে আমি ভয়ে জমে গেছি, তবুও হাত ছাড়লাম না। দাদু দুর্বল হাতে আমাকে শক্ত করে ধরার চেষ্টা করলেন। আমি চোখের পানি মুছে উনার হাত দুটো শক্ত করে ধরে বললাম- কেউ এখানে আসে নি। কেউ তোমাকে নিতে পারবেও না। আমি আছি, ভয় পেয়ো না...
ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প
মনে মনে ভাবলাম, সেই ছোটবেলা থেকে দাদুর কাছে গিয়ে যে সাহস পেয়েছি। দাদু যেভাবে ছায়ার মতো আগলে রেখেছিলেন, আজ সময়ের পরিক্রমায় তিনি আমাদের কাছেই সাহস খুঁজছেন। মৃত্যুর বিষয় উঠলে বার বার তাকে বলতাম- ভয় পাও কেন? সবাইকে তো মরতে হবে, দেখা গেলো তোমার আগে আমিই মারা গেছি।
এ কথা শুনলে দাদু সাহস পেতেন, তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করতো।
সব কথা, সব গল্পের আড়ালে একটা বিষয়'ই নিশ্চিত।
আর তা কেবল 'মৃত্যু'...
২০১৯ এর ০৮ই জুন দাদু সেই নিশ্চিত মৃত্যু'কেই আলিঙ্গন করেন।
আরো পড়ুনঃ সকল ভূতের গল্প
No comments