Bhooter bhoy ভূতের গল্প
ভূতের গল্প কাহিনী-Vuter Golpo Kahini
আমার বাবা-মার বিয়ের ছবিতে একটা মহিলাকে দেখতে পাওয়া যায়। ঐ মহিলা কে, কেউ জানে না।
অনেকদিন পর্যন্ত ঐ মহিলাকে কেউ লক্ষ্য করেনি ছবিতে। ছবিটা গ্রুপ ফটো, বাবা-মাকে সামনে রেখে পরিবারের সবাই ভীড় করে দাঁড়িয়েছেন। কেমন একটা হৈচৈ অবস্থা। ছবিটা সেই যুগের ক্যান্ডিড ছবি, সবাই গ্রুপ করে দাঁড়াতে গিয়ে ঠেলাঠেলি, ধাক্কা-ধাক্কির মধ্যে ছবিটা ভুলে ফটোগ্রাফার তুলে ফেলেছিলেন। পরে ডেভেলাপের পর ছবিটা সবারই ভালো লেগে যায়, তাই ছবিটা আর ফেলে দেওয়া হয়নি। ছবিতে সবার ভীড়ের মাঝে কোনো এক কোণে মহিলার মুখটি কেবল দেখা যায়, তাই হয়তো উনাকে এতোদিন কেউ দেখেনি ছবিতে। মহিলাটিকে প্রথম আবিষ্কার করে আমার ছোটবোন মিতু।ওর হাতের ছোট আঙুলগুলো ছবিতে সেই মহিলার উপর রেখে বলে, 'আন্তি।'
আমরা মহিলাটিকে দেখি। দেখে কেমন অন্যরকম লাগে। ছবিতে যেখানে সবাই হৈচৈ-হাসাহাসিতে ব্যস্ত, ক্যামেরার দিকে কারো চোখ নেই, কেবল সেই মহিলাটিই এক দৃষ্টিতে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছেন।
মহিলাটি কে, কেউ তো জানে না। এর চাইতেও বড় প্রশ্ন হলো, মিতু উনাকে চিনলো কিভাবে? এতো ছোট্ট মেয়েটা, আমাদের আপন মামাকেই সে ঠিকমতো চেনেনা, কিন্তু মহিলাটিকে দেখেই সে 'আন্তি, আন্তি' বলে চেঁচিয়ে উঠে।
আমরা হঠাৎ ভয় পেতে লাগলাম।
মিতু অদ্ভুত সব কাজ করা শুরু করলো। মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে ঘরের অন্ধকার কোণটার দিকে তাকিয়ে 'আন্তি, আন্তি' বলা শুরু করলো। কখনো মাঝদুপুরে, অদৃশ্য কারো ডাক শুনেই যেন ছোট ছোট পায়ে চলে যেত পাশের ছোট রুমে।
আবার কখনো, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতো আমাদের পিছে, যেন ভয়ংকর কিছু দেখতে পারছে। অথচ আমাদের পিছনে কিছুই থাকতো না।
মা বাবাকে বারবার বলছিলো, 'চলো, এই বাসা থেকে চলে যাই।' বাবা মায়ের কথা শুনতো, হয়তো কানেও নিতো, কিন্তু বাসা ছাড়া তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তখন তার অল্প বেতন, ঢাকা-শহরে এ বাসার মতো দুরুমের বাসা এখন নিতে গেলেই এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া লাগবে। তবুও বাবা এদিক ওদিক বাসা খুঁজছিলেন। কিন্তু, বড্ড দেরী হয়ে গেল।
এক সকালে ঘুম থেকে উঠে মিতুকে আর আমরা খুঁজে পেলাম না।
আমার ছোট বোনটা যে কোথায় চলে গেল, কেউ জানতেই পারলো না। বাসার দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিলো, ও যে দরজা খুলে চলে যাবে, এমনটা সম্ভব না মোটেই। পাশের বাড়ির আন্টি বলছিলো, ভোররাতের দিকে তিনি মনে হয় একটা বাচ্চার চিৎকার শুনেছিলেন, চিৎকারটা এসেছিলো আমাদের বাড়ির একটু দূর থেকে। অতোটুকুই। আর কোনো খবর পাইনি মিতুর। ওর খিলখিল হাসির শব্দ, ছোট ছোট পায়ে সারাঘর দৌড়ে বেড়ানোর দৃশ্য, খাবার খেতে গিয়ে ভণিতা করার দৃশ্য, সব হারিয়ে গেল এক নিমেষে।
কেবল একটা বিষয় আবিষ্কার করেছিলাম অনেকদিন পর। যেই ছবিতে সেই রহস্যময় মহিলাকে দেখেছিলাম, সেই ছবির নেগেটিভে ঐ মহিলাটি ছিলেন না। কেবল ডেভেলাপ করা ছবিতেই মহিলাটি চলে এসেছিলেন কোনো এক অজানা রহস্যময় কারণে।
ছবিটা এখনো আছে আমার কাছে। এখনো সেই মহিলাকে খুঁজে চলেছি আমি। যদি কখনো পেয়ে যাই তাকে- তিনি যে ভুবনেরই হন, আমি তাকে ছাড়বো না।
গল্প- ছবি
No comments